কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের জাগিরপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ২১ বছর আগে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে কাজের সূত্রে পরিচয় হয় ইন্দোনেশিয়ান এক নারীর সঙ্গে। পরিচয় থেকে পরিণয়। তাদের সংসারে জন্ম হয় চার সন্তানের। দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। তাদের রেখে ইন্দোনেশিয়ান নারী নিজ দেশে চলে যান বছর ছয় আগে। আর যোগাযোগ রাখেননি। তারপর থেকে চার ভাই বোন ছিল বাবার কাছে। গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন জাহাঙ্গীর আলম। বাবার মৃত্যুর পর এতিম চার শিশু আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে।
ঠাঁই হয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ড পরিচালিত জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে। সেখানে আট মাস কাটিয়ে চার ভাই বোন গত শনিবার পিতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরেছে কল্যাণ বোর্ডের সহায়তায়। বিমানবন্দরে তাদের গ্রহণের পর সমাজসেবা অধিদপ্তরের তেজগাঁওয়ের শিশু পরিবারের আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। আপাতত সেখানে থাকবে। এরপর কি হবে? সেই জবাব নেই কারো কাছে।
বিমানবন্দরে চার শিশুকে গ্রহণ করা ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মুশাররাত জেবিন সমকালকে জানিয়েছেন, তাদের নিকট আত্মীয়ের সন্ধান মেলেনি। দাদা, দাদি, চাচা বা ফুপুর খোঁজ পাওয়া যায়নি। অন্য যেসব আত্মীয়রা রয়েছেন তারা গরিব। তারা চারটি শিশুর দায়িত্ব নিতে চাইছে না। এর আগে কখনো চারজন শিশুকে এক সঙ্গে ফিরিয়ে আনা হয়নি। শুধু অর্থায়ন নয়, কল্যাণ বোর্ডের কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। জন্ম সনদ জোগাড় করে কল্যাণ বোর্ড।
কল্যাণ বোর্ডের চিঠি অনুযায়ী, চার শিশুর নাম জমিলা, মুজাহিদ, সামিয়া ও ইয়াসিন। সবার বড় ১৩ বছর বয়সী জমিলা। সবার ছোট ইয়াসিনের বয়স ৭ বছর। জেদ্দা কনস্যুলেটের প্রথম সচিব মোঃ আরিফুজ্জামান শিশুদের সঙ্গে নিয়ে দেশে ফিরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাদের মায়ের খোঁজে ইন্দোনেশিয়ায় যোগাযোগ করে তথ্য মেলেনি।
চার শিশু এবারই প্রথম বাংলাদেশে এসেছে। জমিলা জানায়, তাদের বাবা কয়েকবার দেশে ফেরার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কখনও আসা হয়নি। বাবার দিকের কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ পরিচয় নেই। বাবার মৃত্যুর পর সৌদিতে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে লেখাপড়া করতে চায় করতে তারা।
মুশাররাত জেবিন সমকালকে জানিয়েছেন, অপরিচিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে চার ভাইবোনকে আপাতত একসঙ্গে রাখা হবে। কল্যাণ বোর্ড আর্থিক সহায়তা দিলেও চার শিশু থাকবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে। তাদের লালন পালন ও দেখাশোনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে অধিদপ্তরকে। শিশুদের মায়ের বিষয়ে তিনি জানান, ফাইলে শুধু মায়ের নাম উল্লেখ রয়েছে। আর তথ্য নেই।
১৮ বছর বয়স পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু পরিবারে থাকতে পারবে সৌদি ফেরত চার ভাইবোন। লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। নিকট আত্মীয়ের খোঁজ না মেলায় এবং দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা দায়িত্ব নিতে রাজি না হওয়ায়, এরপর তারা কোথায় যাবে তা অজানা।