বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর ৬০ কিংবা ৯০ দিন আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা সেটিই এখন সর্বত্র আলোচনায়। রাষ্ট্রের সবচেয়ে পদে রাজনৈতিকভাবে পোড় খাওয়া ও বিশ্বস্ত কাউকে বেছে নিতে চাইবে আওয়ামী লীগ।
রাজনীতির অন্দরমহলে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে আলাপ-আলোচনা যাই থাকুক না কেন, দিন শেষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এই মুহূর্তে চার-পাঁচটি নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে একজনকে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদটিতে মনোনয়ন দেবেন এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
তৃণমূল থেকে উঠে আসা বর্ষীয়ান ও জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথমে ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধান অনুযায়ী তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’
ফলে মো. আবদুল হামিদের রাষ্ট্রপতি হিসাবে চলতি মেয়াদই শেষ,আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’
সংবিধানের এই নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকারি দল।
জাতীয় সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় আওয়ামী লীগ যাকে মনোনয়ন দেবে তিনিই হবেন রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগ মনে করছে, আবদুল হামিদ যেভাবে বিগত দুটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এমন একজনকেই এমন পদে আনতে হবে।
রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিয়ে। এর পেছনে যুক্তিও আছে। প্রথমত এর আগে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার ছিলেন। সেজন্য স্পিকার থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করতে পারে-এরকম একটি ধারণা অনেকের মধ্যে কাজ করছে। আবার অনেকেই মনে করছেন, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন।
আবদুল হামিদ যেমন স্পিকার হিসেবে আস্থাভাজন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য ছিলেন তেমনি শিরিন শারমিনেরও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এ কারণে তাকে আবদুল হামিদের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া শেখ হাসিনা তার চার মেয়াদের শাসনামলে নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীকে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকার, সংসদ উপনেতা পদগুলোতে নারীরা রয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতি পদেও প্রথমবারের মতো কোনো নারীকে দেখা যেতে পারে।
সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির এই আলোচনায় আরও বেশ কয়েকজনের নাম রাজনীতির অন্দর মহলে আলোচিত হচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।
বেগম মতিয়া চৌধুরীকে জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসাবে দেখা যেতে পারে চলতি অধিবেশনে। তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
প্রবীণ রাজনীতিক আমির হোসেন আমুকে শেষ জীবনে শেখ হাসিনা আবারও মূল্যায়ন করবেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মোজাম্মেল হকের নামও রাষ্ট্রপতি পদে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় রয়েছে।
তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন)-এর ৫ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।